চুক্তি অনুযায়ী খুলনায় ১১টির মধ্যে পাঁচটি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল হয় ছয় মাসে। অথচ পাঁচ বছরেও তা শেষ হয়নি।
এরমধ্যে আবার ২টির নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি। অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্তের ভাষ্য, জায়গা নিয়ে জটিলতা ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে এ দুর্দশা তৈরি হয়েছে।
এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে খুলনার কয়েকজন মুসল্লি জানান, মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ একটু একটু করা হচ্ছে। ফেলে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে ব্যয় বাড়ছে, মানুষ সুফল পাচ্ছে না।
গণপূর্ত অধিদপ্তর জানায়, দেশে একইস্থান থেকে বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনায় উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এসব মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। খুলনায় এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা, বিভাগীয় কমিশনার অফিস, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, কয়রা, তেরখাদা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ১১টি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
ইতিমধ্যে জেলাপর্যায়ে আলিয়া মাদ্রাসা এবং উপজেলা পর্যায়ে তেরখাদা, রূপসা, ফুলতলা ও পাইকগাছা উপজেলায় মসজিদ নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলেও কাজের মান নিম্নমানের। তবে কয়েকদফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি বিভাগীয় কমিশনার অফিসের পাশে, ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া ও কয়রা উপজেলায় নির্মাণকাজ।
এরমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার অফিসের পাশে ও ডুমুরিয়া উপজেলা মসজিদ নির্মাণে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে দিঘলিয়া উপজেলায় মসজিদ নির্মাণে অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। এর দোতলার ছাদ ঢালাইয়ের সাটারিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তবে কয়রা উপজেলায় কাজ শুরু হলেও দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি।
দিঘলিয়ায় মডেল মসজিদ নির্মাণে ধীর গতির কারণ সম্পর্কে গণপূর্ত অধিদপ্তর-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র শীল বলেন, ২০১৯ সালে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কিছু কাজ করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ফলে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে গত ১২ মার্চ এসএম বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানকে ১২ মাস সময় দেওয়া হয়। এখন কাজ চলমান রয়েছে। মূলত আগের ঠিকাদারের গাফিলতি ও পরে ঠিকাদার নিয়োগে সময়মতো কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।
কয়রা উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ- ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কয়রা উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণে প্রথমে কাজ পায় মেসার্স মধু ট্রেডার্স। ২০১৯ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ সমাপ্তে সময় দেওয়া হয় হয় মাস। কিন্তু নকশার সঙ্গে জমির অমিল দেখ্য দেওয়ায় কাজ দেরি হয়।
সে কারণে কার্যাদেশ বাতিল হয়। তবে জমির জটিলতা নিরসন করে গত ১৪ মে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সনের ইন্টারন্যাশনাল-মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজকে (জেভি) কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানকে কাজ বাস্তবায়নে ১২ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ২০ দিন আগে কাজ শুনা হয়েছে।
দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, দাকোপ উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণে ২০১৯ সালে ১৩ জুন এমসিএএল অ্যান্ড আইসি (জেভি) নামে প্রতিষ্ঠানকে ও বটিয়াঘাটা উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণে ২০১৯ সালের ২৭ মে মো. মিজানুর রহমান নামের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজে গাফিলতির কারণে ওই দুই প্রতিষ্ঠানে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।
তাদের কার্যাদেশ বাতিল করার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আদালতে মামলা করে। তবে সেই মামলা খারিজ হয়ে গেছে। চলতি বছর ২১ মার্চ নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএনবিপিএল- এনএইচএরকে (জেভি) কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দুটি উপজেলায় মসজিদ নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যেটির কাজ শুরু হয়নি, সেটির কাজ শিগগিরই শুরু হবে। চলমান কাজও দ্রুত সমাপ্ত হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৩ কোটি থেকে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। জেলাপর্যায়ে আলিয়া মাদ্রাসায় মসজিদ নির্মাণে ১৬ কোটি ‘৪৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মসজিদ নির্মাণে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
নির্মাণাধীন এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী এবং পুরুষদের পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা এবং দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজ, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা। হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকবে। ইমাম-মুয়াজ্জিদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসে ব্যবস্থাও থাকবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মসজিদে ৯০০ মুসল্লি এব যে আজ্ঞা বিভাগীয় পর্যায়ের মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন